প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা কিভাবে নির্ধারণ হয়?এ বিষয়ে জেনে নিন জ্যৈষ্ঠতা নির্ধারণ নীতিমালার আলোকে।
১। ৪ঠা মে ২০১১ এ প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনের ৪(১) “ক” এ বলা আছে পুর্ববর্তী উম্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ পরবর্তী উম্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের উপর জ্যেষ্ঠতা পাইবে।
২। ৪ঠা মে ২০১১ এ প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনের ৪(১) “খ” এ বলা আছে মেধা তালিকা না থাকিলে বা পাওয়া না গেলে তাদের পারস্পরিক জ্যৈষ্ঠতা বয়সের ভিত্তিতে নির্ধারিত হইবে।কিন্তু এক্ষেত্রে নিয়োগকারি কর্তৃপক্ষ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং গ্রেডেশান তালিকা প্রণয়ণ করেন উপজেলা শিক্ষা অফিস সেক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিস মেধাতালিকা যাচাইয়ের সূযোগ নেই।
মেধাতালিকা না থাকলে কিভাবে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ হয়?
আবার, সহকারি শিক্ষক পদের জন্য কোন প্রকার মেধাতালিকা সংরক্ষণ ও করা হয়নি কিংবা সংরক্ষণ কপি পাওয়া যাচ্ছেনা সেক্ষেত্রে একই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অধিনে বয়স ভিত্তিতেই পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে। অন্যদিকে মেধাতালিকা এক হলেও রোল নম্বরের কারণে একই মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ হয়। আবার বিভিন্ন কোটা যাচাইকালে , এবং শুণ্য পদের সৃষ্টি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে ও একই মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি ভিন্নস্তরে বা নিচের দিকে অবস্থান করতে পারে।
২০ জুন ২০০৫ প্রজ্ঞাপন, ৪মে ২০১১ প্রজ্ঞাপন, ১ আগস্ট ২০১৩ প্রজ্ঞাপন, ৩সেপ্টেম্বর ২০১৩ প্রজ্ঞাপন এবং সবশেষে এস আর ও নম্বর৮৮-আইন/২০১৯ এর কোথাও একই উম্মুক্ত তালিকায় নি্যোগকৃত ব্যক্তির আলাদা স্বারকে নিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে বয়স বা যোগ্যতা ভিত্তিক পৃথক পৃথক ভাবে গ্রেডেশানের সুযোগ রাখা হয়নি।
সেক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন স্বারকে বা ভিন্ন তারিখে নিয়োগ হলেও ৪(১) ধারা মোতাবেক একই উম্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ পরবর্তী উম্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের উপর জ্যেষ্ঠতা পাইবে এবং একই উম্মুক্ত তালিকায় নি্যোগকৃত ব্যক্তির আলাদা স্বারকে নিয়োগ হলেও একই পদের ক্ষেত্রে অবশ্যই বয়স বিবেচনা করে সমন্বিত জ্যেষ্ঠ্যতা নির্ধারণ করতে হইবে।
প্রাথমিকের জুলাই/ডিসেম্বর মাসের বকেয়া উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের নিমিন্ত পেন্ডিং চাহিদা প্রদান
৩। জুন ২০,২০০৫ এর সংস্থাপন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি শুধুমাত্র “আইডিএ সাহায্যপুষ্ট ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প এবং এডিবি সাহায্যপুষ্ট চট্টগ্রাম,সিলেট ও বরিশাল বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প নিয়োগকৃত কর্মকর্তা –কর্মচারীর রাজস্ব বাজেটের পদে নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠ্যতা নির্ধারণ বিধিমালা” হিসাবে পরগণিত। এতে স্পস্টভাবে ২(খ), (গ), (চ), (ছ) উপবিধিতে যথাক্রমে উন্নয়ন প্রকল্পের চাকুরীকাল, উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিয়মিতকরণ, রাজস্ব বাজেটের পদ, সাময়িকভাবে পদস্থ এর সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া আছে।
এ অবলম্বনে উক্ত প্রজ্ঞাপনের ৬(১) ধারায় জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিষয়ে বলা হয়েছে “এই বিধিমালার অধীনে নিয়মিতকৃত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাহার চাকুরী নিয়মিতকরণের তারিখ হইতে গণণা করিতে হইবে।আবার ৭ নং ক্রমিকে স্পষ্ট বলা আছে নিয়মিতকৃত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর উন্নয়ন প্রকল্পে চাকুরীকাল তাহার বেতন, ছুটি, পেনশন ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণণা করা হইবে।
অন্যদিকে নিয়োগ পত্রে বলা আছে প্রকল্পের মেয়াদ শেষে রাজস্বে স্থানান্তর করা হতে পারে সেক্ষেত্রে প্রকল্পকালীন চাকুরীকাল কোন ক্রমেই জুন ২০, ২০০৫ প্রজ্ঞাপন এর ২(খ), (গ), (চ), (ছ) এবং ৬(১) অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ এর ক্ষেত্রে বিবেচিত হইবেনা। এ বিধিমালা জুন, ২০০৫ এ জারি হয় এবং বিশেষ আইনের মাধ্যমে রাজস্বখাতে স্থানান্তর করা হয় তাই উক্ত আইনের অধীনে নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যাক্তি জুন ২০,২০০৫ এর পূর্বে গ্রেডেশনভুক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
৪। ০১আগষ্ট,২০১৩ প্রজ্ঞাপন অধিগ্রহনকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিধিমালা,২০১৩ পর্যালোচনা সাপেক্ষে ৯ নং ক্রমিকে বলা আছে বিধি ৪ এর অধীন কোন শিক্ষকের নিয়োগ প্রদানের তারিখ হইতে কার্যকর চাকুরিকালের ভিত্তিতে শিক্ষক পদে তাহার জ্যেষ্ঠতা গণণা করা হইবে উক্ত তারিখের অব্যবহিত পুর্বে নিয়োগবিধির অধীন শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যক্তির নিম্নে উক্ত শিক্ষকের অবস্থান নির্ধারিত হইবে। এ বিধি ১জানুয়ারি,২০১৩ থেকে কার্যকর বিধায় উক্ত আইনের অধিনে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোন ক্রমেই ২০১৩ সালের পূর্বে উম্মুক্ত প্রজ্ঞাপনের অধিনে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপরে গ্রেডেশান নির্ধারণের সূযোগ নেই।
৫। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর স্বারক নং ৯টি-৬-বিদ্যা-বরি/২০০৩/৪১৩/১০৪০ তারিখ ০৫-০৫-২০০৪ এ বলা আছে “ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ সিনিয়রিটি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির সময় কোন কারণে স্বেচ্ছায় একবার পদোন্নতি গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনের তারিখের পুর্বের সিনিয়রিটি বাতিল বলে গণ্য হবে। পরবর্তীতে পদোন্নতির বিষয় সিনিয়রিটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তার অস্বীকৃতি জ্ঞাপনের তারিখ থেকে তার চাকুরীকাল গণণা করে সিনিয়রিটি নির্ধারণ করিতে হইবে।“ এ আদেশ মতে পুর্বে অপারগতা প্রকাশ করা শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ ২০১৭ সালে নিয়োগকৃত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের নিম্নে অবস্থান করবে।
প্রাথমিক শিক্ষক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ নীতিমালা, ২০১৯
৬। নিয়োগ বিধি ২০১৯( ৬) নং ক্রমিকে বলা হয়েছে স্বীয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে আবেদন করিয়া কোনো ব্যক্তি নিয়োগপ্রাপ্ত হইলে উক্ত নিয়োগ নতুন নিয়োগ হিসেবে গণ্য হইবে এবং তাহার পূর্ব চাকুরীকাল শুধু পেনশন ও বেতন সংরক্ষণের জন্য প্রযোজ্য হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, জ্যেষ্ঠতা বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধাদির জন্য উক্ত কর্মকাল গণণাযোগ্য হইবেনা। সেক্ষেত্রে চাকুরীকাল ও জ্যেষ্ঠতা এক নয়। তাই চাকুরীকাল গণনা করে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করার কোন সুযোগ নেই।
বেশি বেশি শেয়ার করুন অন্যকে জানতে সহায়তা করুন। প্রয়োজনে কমেণ্ট করুন।